অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক::: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ঢাকায় এক হাজারের বেশি ফ্ল্যাট নির্মাণের একটি প্রকল্পে সায় দিয়েছে একনেক।
পাশাপাশি বেইলি রোডে মন্ত্রীদের করে দেওয়া হবে আবাসিক ভবন।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।
শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়।
পরে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৮৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার ৬৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্পে একনেক অনুমোদন দিয়েছে।
ঢাকার মিরপুরে ৬ নম্বর সেকশনে এই আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে।
তিনি বলেন, “ঢাকা শহরে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৯১০ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত আছেন। কিন্তু ১৩ হাজার ৫২ জনের (৮ শতাংশ) জন্য আসনের ব্যবস্থা রয়েছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকার ২০১৯ সালের মধ্যে ৪০ ভাগ ফ্ল্যাট নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
এই প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর মিরপুরে ১০ একর খাস জমিতে ১০টি বিশতলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করবে সরকার, যেসব ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ১৫০০ ও ১২৫০ বর্গফুট।
গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদপ্তর ২০১৯ সালের জুন নাগাদ নির্মাণ কাজ শেষ করবে বলেও জানান মন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
মন্ত্রীদের জন্য আবাসিক ভবন তৈরির প্রকল্পের বিষয়ে তিনি জানান, “প্রকল্প প্রস্তাবনায় ১৫ তলার আবাসিক ভবন নির্মাণের কথা বলা হলেও ওই এলাকার বহির্দৃশ্য ও সবুজ রক্ষায় ছয় তলার বেশি ভবন না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
“এসময় তিনি হেয়ার রোড ও মিন্টু রোডের সৌন্দর্য্য রক্ষায় একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন।”
আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, প্রকল্পটির মাধ্যমে মোট ২৮টি ফ্ল্যাট নির্মিত হবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন হবে ৫ হাজার ৫০০ বর্গফুট। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৪ কোটি টাকা।
গণপূর্ত অধিদপ্তর ২০১৮ সালের জুন নাগাদ ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করবে।
এর বাইরে আরও পাঁচটি প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এই সাত প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫০৪ কোটি টাকা বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে।
বাকি টাকা আসবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে।
অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য বসতভিটা তৈরির একটি প্রকল্পও রয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘গুচ্ছগ্রাম-২য় পর্যায় (ক্লাইমেট ভিকটিমস্ রিহ্যাবিলিটেশন)’ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙ্গনের ফলে ভূমিহীন দশ হাজার পরিবারের মধ্যে বসতবাড়ি বিতরণ করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক পরিবারের জন্য ৩০০ বর্গফুট আয়তনে আরসিসি পিলারসহ দুই কক্ষ বিশিষ্ট ঘর এবং পাঁচ রিং বিশিষ্ট স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হবে।
সরকারি খাস জমিতে এসব বসতভিটা নির্মিত হবে বলে জানান মুস্তফা কামাল।
মন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পটি দেশব্যাপী হলেও রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ প্রাধান্য পাবে।
“বসতভিটা বিতরণ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য সরকার প্রতিটি পরিবারকে এককালীন পনের হাজার টাকা দেবে। এছাড়াও এসব এলাকায় সুপেয় পানি ও বিদ্যুতেরও ব্যবস্থা করা হবে।”
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ২৫৮ কোটি টাকায় ভূমি মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের জুন নাগাদ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
‘এস্টাবলিশমেন্ট অফ ৯৯ কম্পোজিট ব্রিজ ফর ব্রিগেড ফর সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অফ পদ্মা ব্রিজ’ নামে প্রকল্পের আওতায় পদ্মা বহুমুখী সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাজিরা প্রান্তে একটি ব্রিগেড স্থাপন করবে সরকার।
একই সঙ্গে সেতুর মাওয়া প্রান্তের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য স্থাপনাও নির্মাণ করা হবে।
অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্থাপনা। এর নিরাপত্তার জন্যই সেতুবিভাগ থেকে প্রাপ্ত ১১৫ একর জমিতে ‘৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড’ স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা।”
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ২০১৯ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের প্রকল্প। এই প্রকল্পে ৬০২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও পুনর্বাসন করা হবে। একই সঙ্গে করা হবে ৬৪০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি সেতু।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২০২০ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পটি সম্পন্ন করবে বলে সভায় জানানো হয়।
সভায় ৪৫ কোটি টাকায় ‘খুলনা (রূপসী)-শ্রীফলতলা-তেরখাদা সড়ক উন্নয়ন’ এবং ৮৫২ কোটি টাকায় ‘নাজিরহাট-মাইজভাণ্ডার সড়ক উন্নয়ন’ নামে আরও দুটি প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হয়।